আজ ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ফজুমিয়ার হাট মাতাব্বর নগর দারুচ্ছুনাত আলীম মাদরাসায় কর্মচারীর ৪টি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অভিযোগ।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ফজুমিয়ার হাট মাতাব্বরনগর দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসায় কর্মচারীর চারটি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ ওঠেছে,পদগুলোতে কর্মচারী নিয়োগে নিয়ম রক্ষার পরীক্ষায় দু’টি পদে মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতির ছেলে ও এক আত্মীয় (সম্পর্কে নাতি) এবং অপর দু’টি পদে অধ্যক্ষের পছন্দের দুই প্রার্থীকে চুড়ান্ত করা হয়েছে। সভাপতি-অধ্যক্ষ যোগসাজশ করে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ম্যানেজের মাধ্যমে কাজটি করে এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপচেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার সর্বত্র চলছে নানান গুঞ্জন। সোসাল মিডিয়া জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করে মাদ্রাসাটির সুনাম রক্ষায় জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন খোদ প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চার সদস্য। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ছাড়াও রুটিন অনুযায়ী পাঠাদান না হওয়া এবং অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয় অভিযোগে। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য (অভিভাবক সদস্য) হাবিব উল্যাহ, মনির আহমদ, আবদুর রহিম ও আকরাম হোসেন সাহেদ হাওলাদারের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মাতাব্বরনগর দারুচ্ছুন্নাত আলিম মাদ্রাসার চারটি পদে (অফিস সরহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া) নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী পদগুলোতে ৪৮ জন প্রার্থী আবেদন করলে ৮ অক্টোবর তাঁদেরকে নিয়ে মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ পরীক্ষার আগেই মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মো.আব্দুর রবের ছেলেসহ বিভিন্ন পদে প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে চলে আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে ব্যাপক সমালোচনা। বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন চাকরি প্রার্থীরাও। কিন্তু,এসব কিছুই তোয়াক্কা না করে ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের ১৬ প্রার্থীর মধ্যে সভাপতির ছেলে মো.সোলাইমান,অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী পদের ১৫ প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের পছন্দের প্রার্থী ছাত্রদল নেতা মো.আল-আমিন, নিরাপত্তাকর্মী পদের আট প্রার্থীর মধ্যে সভাপতির আত্মীয় (সম্পর্কে নাতি) ও আয়া পদের নয় প্রার্থীর মধ্যে অধ্যক্ষের বাসার কাজের মেয়ে শারমিন আক্তারকে চুড়ান্ত করা হয়েছে। অথচ,তাঁদের চেয়ে ওইসব পদের অপর প্রার্থীরা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, নীতিমালা অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য গভর্নিং বডির সভায় ‘নিয়োগ কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব ও অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ গভর্নিং বডির অভিযোগকারী ওই চার সদস্যকে না জানিয়েই ‘নিয়োগ কমিটি’ গঠন করেছেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে নিয়োগ কমিটি কীভাবে গঠন হয়েছে এবিষয়ে তাঁরা অধ্যক্ষের কাছে জানতে চান। কিন্তু অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোছাইন তাঁদেরকে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

গভর্নিং বডির সদস্য হাবিব উল্যাহ জানান,
অধ্যক্ষের আর্থিক দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারণে মাদ্রাসাটি এখন সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। প্রায় ৮০০ শিক্ষার্থীর এ প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সম্পর্কে অধ্যক্ষ ছাড়া অন্য কেউ জানেন না। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন আয় ব্যাংক হিসাবে জমার মাধ্যমে ব্যয় না করে অধ্যক্ষ নিজের ইচ্ছে মতো খরচ করছেন। কাউকে কোনো হিসাব না দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। যা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব তলব করলেই প্রমাণ মেলবে। তিনি বলেন, আমি পাঁচ মেয়াদে সাত বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সদস্য পদে রয়েছি। বিভিন্ন সভায় আমি অধ্যক্ষের এসব দুর্নীতির বিষয়ে কথা বললেও এর প্রতিকার মিলছে না। সম্প্রতি চারটি পদে নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের কারণে মাদ্রাসাটি নিয়ে সর্বত্র ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তাই,প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির একজন সদস্য হিসেবে এর সুনাম রক্ষায় এ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল করে নতুনভাবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ সম্পন্নের দাবি করছি।

এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা আলী হোছাইন জানান, স্বচ্ছতার মাধ্যমেই তিনি এ নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করছেন। এছাড়া যথাযথ নিয়মে তিনি প্রতিষ্ঠানের টাকা ব্যয় করছেন; কোনো অনিয়মের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন। তবে,প্রত্যেকটি পদের এতসব প্রার্থীকে পেছনে ফেলে সভাপতির ছেলে ও আত্মীয় এবং তাঁর কাজের মেয়ে পরীক্ষায় কীভাবে প্রথম হয়েছেন,এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতি মো.আব্দুর রব জানান, তাঁর ছেলে ও নাতি সম্পূর্ণ মেধার মাধ্যমে পরীক্ষায় প্রথম হয়ে নিয়োগের জন্য চুড়ান্ত হয়েছেন। এখানে তাঁর কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। তাঁদের প্রার্থিতার কারণে তিনি নিয়োগ কমিটিতে ছিলেন না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগটি তদন্তের জন্য শিগগিরই একটি কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category